আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

লাশ কাটা ঘরে শিশু

# এটা অপরাধ : ভবানী শংকর রায়।

#সরকারিভাবে সহযোগী নেই: সিভিল সার্জন

অ.শুভ
লাশ কাটা ঘরে ডোমের সাথে তার ১১ বছরের মেয়েটাকেও কাজ করতে হয়। শিশুটির বাবা মদ খেয়ে মাতাল থাকায় তার মেয়ের কষ্ট হয়তো বুঝতে পারেনা। তবে চোখের সামনে এমন নির্মম শিশু শ্রমের ঘটনায় আজও কোন মহল কোন ধরনের প্রতিবাদ করেনি, প্রতিকারতো দূরের কথা। এদিকে কাটা লাশ সেলাইয়ের জন্য দর্পণ ডোমের একটাই চাহিদা ‘টাকা দে মদ খাবো।’

নারায়ণগঞ্জের কোথাও অপমৃত্যু হলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আনা হয় নারায়ণগঞ্জের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া ) হাসপাতালের মর্গে। এই মর্গে লাশ কাটার জন্য সরকারি ভাবে নিয়োগ রয়েছে দর্পণ নামে এক ডোমের। দর্পণের আগে তার শশুর কুটুয়া লাশ কাটতো। তারও আগে ছিলো কুটুয়ার বাবা ভিম। তিন যুগ ধরে লাশ কাটা পেশার সাথে জড়িত তারা। পূর্বে লাশ কাটা ঘর ছিলো মন্ডল পাড়ায়। পরে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের পেছনে নতুন করে নির্মাণ করা হয় লাশঘর।

পাশের একটি খুপড়ি ৩ কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ডোম দর্পণ। পারিবারিক ভাবে তারা কয়েক যুগ ধরে এই পেশায় থাকলেও তাদের কোন ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি লাশ কাটার পর সেলাই করতে ডোম দর্পণ টাকা নেয়। টাকা না দিলে কাটা লাশ ফেলে রাখে। সেলাই করতে বললে সে বলে, টাকা দে মদ খাবো। সূত্র মতে, নিহতের স্বজন কিংবা লাশের সাথে আসা ব্যক্তিরা ডোমকে টাকা দিয়ে লাশ বুঝে নেয়। অজ্ঞাত লাশ হলে পুলিশ কেও টাকা দিয়ে লাশ নিতে হয়। কেননা টাকা না দিলে লাশ কাটা ঘরের সামনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

ডোম দার্পণের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, একা একটি লাশ বহন করে ঘরে নেয়া যায়না। লাশ কাটার পর তা সেলাই করে হস্তান্তর পর্যন্ত সাথে সহযোগীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহকারী দেয়নি। এজন্য ব্যক্তিগত ভাবে যারা সহযোগিতা করে তাদের মুজুরি দিতে হয় তার। দর্পণ যখন কথা বলছিলো তখন তার মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছিলো। স্থানীয়রা জানান, সে সময়ই মাতাল থাকে।

এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া জেনালের হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান জানান, হাসপাতালে একজন ডোম কাজ করে। সহযোগীর কোন পদ না থাকায় সে একাই রয়েছে। তবে তাকে তার পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করে লাশ প্রক্রিয়া করার জন্য। ডোমের সহযোগিরা এ জন্য নিহতের স্বজনদের কাছ আর্থিক সহযোগিতা নেয়। তিনি বলেন, একজন ডোমের পক্ষে একা লাশের প্রক্রিয়া করা সম্ভব নয়।

হাসপাতালের এ কর্তা ব্যক্তি সত্য স্বীকার করলেও ডোমের সহযোগী কেন নেয়া হয় না সে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। সহযোগী না থাকায় ১১ বছরের একজন শিশুকে ডোমের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে তা কেন তাদের নজরে পরছেনা।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও শিশু সংগঠক ভবানী শংকর রায় জানিয়েছেন, শিশুকে দিয়ে এই কাজ করানো অপরাধ। এধনের কাজ প্রশ্নই আসে না। এটা অমানবিক কাজ।

জানা গেছে, উন্নত বিশ্বে ময়নাতদন্তের জন্য আধুনিক যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রিক্যাল করাত, উন্নতমানের এক্সরে মেশিন ও এক্সলাবিন (আলামত রক্ষাকারী বাক্স), লাশ সংরক্ষণের ক্যামিকেল। এ তিনটি যন্ত্রের একটিও নেই ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মর্গে।

সিভিল সাজর্ন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, জেনারেল হাসপাতালের মর্গে একজন ডোম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে লাশের প্রক্রিয়া হয়েছে এখনো সেভাবে চলছে। সেখানে সরকারি ভাবে কোন সহযোগী নেই।